Tuesday, October 31, 2017

ভাই-বোনের ভালোবাসা ।

- ভাইয়া কই যাচ্ছিস?
- তোকে বলে যেতে হবে?
- হু বলে যেতে হবে।
- আচ্ছা বলছি, আমি এখন পার্কে যাব।
- কেন যাবি?!
- এক মেয়ের সাথে পিরিত করতে!
- সত্যি?!
- ধুরর!
মেজাজ দেখিয়ে চলে যাচ্ছি। এমন সময় মিতু বলে উঠলো। "ভাইয়া বাইরে থেকে আসার সময় আমার জন্য একজোরা কানের দুল নিয়ে আসিস।"
আমি বললাম, একজোরা 'গাজী টায়ার' নিয়ে আসবো।
অনেকদিন পর পার্কে আসলাম। বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা, ঘুরাঘুরি এবং প্রেসক্লাবে খাওয়ার পর রাত্রে বাসার দিকে রওনা হলাম। 
এমন সময় মনে পড়লো মিতুর কথা! 
ও তো বলেছিলো, "কানের দুল নিয়ে যেতে!"
পকেটে হাত দিয়ে দেখি ৪৫০টাকা আছে। 
এই টাকা দিয়ে কি হবে! 
ভাবতে ভাবতে একটা গহনার দোকানে গেলাম। 
এবং সুন্দর দেখেই একজোরা কানের দুল নিলাম। 
বাসায় এসেছি রাত ১১টায়। এসেই ঘুম।
সকালে ঘুম থেকে জাগতেই দেখি মিতু আমার জন্য নাস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 
একটা প্লেটে দুইটা রুটি এবং ডিম বাজি। 
আমি বিছানায় উঠে বসতেই বললো, 
- ‘ভাইয়া নাস্তা করে নে। 
আমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।’
এমনিতে মিতু কোনোদিন আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসে না। আর কফি তো দূরে থাক চা টাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আজ দরদ উতলে পড়ছে!
রুটি খেয়ে কফির কাপে চুমুক দিব ঠিক এমন সময় মিতু আমার দিকে হাত পেতে বললো, 
- ভাইয়া দাও।
আমি বললাম, 
- কি দিব?
- গতকাল যে বলেছিলাম।
- আনিনি তো!
বোনটি মুখ গোমরো করে চলে যাচ্ছে। 
এমন সময় আমি ডাক দিলাম, 
- মিতু!
- কিহ্?
- দেখ তো পছন্দ হয় কিনা?
মিতু অনেকটা আপ্লুত হয়ে বললো, 
- আমার লক্ষী ভাইটা।
- আমার পেত্নী বোনটি। 
.
.
ভাই বোনের এমন খুনসুটি সেই শৈশব থেকে আরম্ভ হয় আর দাবিগুলো থাকে সারাজীবন। 
ভাইয়া আমার জন্য এটা আনিস, সেটা কিনিস এই দাবিগুলো পূরণ করতে প্রত্যেকটি ভাইয়ের খুব ভালো লাগে। 
সো আজকেই নিজের ভাইকে একটি আবদার করে। ফেলুন।

এটাই কি আমাদের বিবেক?

আমরা সবাই জানি যে, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । কেনোনা, অন্য প্রাণীদের চেয়ে মানুষ অন্যতম । তাঁদের বুদ্ধি, বিবেক আছে বলে মানুষ শ্রেষ্ঠ । কিন্তু সেই মানুষরাই পথে ঘাটে অন্য মানুষদের সাথে অমানবিক আচরণ করে । তাহলে পশু আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য রইলো কই ? যাই হোক, এই মানুষরুপী জানোয়ারদের অনেকাংশে দেখা যায়না ।
-
নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ডেট করতে গেলে পার্কে বা অন্য কোথাও । গার্লফ্রেন্ডকে ভালো ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য নিয়ে গেলে ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে । গার্লফ্রেন্ডও খুশি, তাতে তুমিও খুশি । যখন তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরাঘুরি করছো তখন এক ক্ষুধার্ত ছেলে এসে দুহাত পেতে চাইলো একটা টাকার জন্য । তখন তুমি তাকে এই বলে তাড়িয়ে দাও যে, তোমার কাছে টাকা নেই । সেই তুমিই একটু আগে তোমার প্রিয় গার্লফ্রেন্ডকে ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে খাওয়ালে । ছেলেটির করুণ অবস্থায় তোমার একটুও মায়া হলো না । ছেলেটি নিরাশ হয়ে চলে গেল । তুমি চললে সামনের দিকে তোমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ।
-
রিকশাওয়ালারা অনেক পরিশ্রম করে আপনাদের কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে দেয় । ফোনে গার্লফেন্ডের সাথে কথা বলছো । তুমি আজ শপিং করতে যাবে তোমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য । গন্তব্যে পৌঁছানোর  পর রিকশাওয়ালা ৫ টাকা বেশী চাইলে তখন তার উপর হাত তুলতে তুমি দ্বিধা করো না । তার কলার ধরে তাকে নিচে ফেলে মারধর করো । সেই রিকশাওয়ালার কোনো বিচার নেই । সে ৫ টাকা চেয়ে কি খুব বড় ভুল করেছিলো ? যে জায়গায় তুমি ৩ হাজার টাকা দিয়ে তোমার গার্লফ্রেন্ডকে জামা কিনে দিতে যাচ্ছো ।
-
অসহায় মানুষটি পেটের জ্বালায় আজ তোমার এবং সবার দুয়ারে গিয়ে দাড়াচ্ছে । দুমুঠো চাল চাওয়ার অপেক্ষায় থাকে । সে করুণ অবস্থা নিয়ে মা মা / কেউ আছেন বলে চেঁচিয়ে যাচ্ছে । কিন্ত তুমি শুনেও না শোনার ভান করে বসে আছো । আর সেই তুমিই কি না তরকারীতে লবণ বেশী হলে তার ছুড়ে মারছো মেঝেতে ।
-

কয়েকদিন আগে একটা কাজে আমাকে সিলেট যেতে হয়েছিল । যথা সময়ে আমি বাসা থেকে বের হলাম সিলেটের উদ্দ্যেশে । বিরতি বাসের টিকিট না পাওয়ায় আমি লোকাল বাসেই উঠলাম । পুরো বাসা খালি । এক পর্যায়ে বাসভর্তি মানুষ নিয়ে ড্রাইভার তার গাড়িটি চালালো । আমাদের বাস স্ট্যান্ড থেকে সিলেট যেতে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ । কিছুটা পথ যাওয়ার পর বাস কন্টাক্টার সবার ভাড়া নিচ্ছে । আমিও ভাড়া দিলাম । আমার পাশের সিটে বসা এক বৃদ্ধ লোকটির কাছে কন্টাকটার ভাড়া চাইলো । ভাড়া হলো ৫০ টাকা । উনার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় সেই কন্টাকটারের কাছে অনুরোধ জানালেন যে তার কাছে এর চেয়ে বেশী টাকা নেই । তিনি কন্টাকটারকে ৪০ টাকা দিয়ে বললেন, “বাবা তুমি এই ৪০ টাকা রেখে দাও । আমার কাছে আর টাকা নেই এই ১০ টাকা খেয়া ভাড়া বাদে” । কন্টাকটার কোনোকিছুতেই মানলো না । তাকে লোকাল ভাড়া দিতেই হবে । কন্টাকটারটি অনেক জেরা শুরু করলো । এমনও বললো যে সিট থেকে উঠে যেতে । আমি আর মানতে পারছিলাম না । কন্টাকটার কে বললাম, “আপনার আর কত টাকা চাই ?” ও বললো, “১০ টাকা” । আমি, “আপনি এই ১০ টাকার জন্য এই বৃদ্ধ লোকটিকে বললেন তাঁর সিট থেকে উঠে যেতে? আপনি বাবা মার মর্যাদা বুঝেন না । একমাত্র পিতৃহারা সন্তানই বুঝে বাবাদের কষ্ট । এই নেন আপনার ১০ টাকা” । এই বলে আমি বৃদ্ধ লোকটিকে তাঁর সিটে বসালাম । গাড়ি ভর্তি এত মানুষ থাকতে কেউ ১০ টাকা দিতে এগিয়ে আসলো না । সবাই তাকিয়ে দেখছে আর মজা নিচ্ছে । এই হলো আমাদের মানুষদের বিবেক । 

“আমার নাম... অতঃপর ডিসকানেট” (Part – 02)

“আমার নাম... অতঃপর ডিসকানেট” (Part – 02)
লিখাঃ- Raju Das Rudro
.
আজ অরুণিমার পরিক্ষা দেওয়ার কথা। যদিও আমি ধরে নিয়েছি যে অরুণিমা পরিক্ষা দিবে না। যদি সে ভুলক্রমে পরিক্ষা দিয়েই ফেলে তাহলে তা হবে “ সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয়” এমন টাইপের ঘটনা। আমি অরুণিমার সামনে গিয়ে থাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
-আজকে পরিক্ষা তাইনা? নিশ্চই সব পড়া হয়ে গেছে?
- (মুখ অন্ধকার করে সে জবাব দিলো) না স্যার কিছুই হয়নি।
- কেন? কি হয়েছে? শরীর খারাপ ছিল নাকি?
- না স্যার। শরীর খারাপের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল। তাই অনিবার্যকারণবসত আজ পরিক্ষা হবে না।
- কি সব উলটাপালটা বলছো?
- স্যার আজকে তো হরতাল ছিল।
- তো কি হয়েছে?
- স্যার, হরতালে তো সাধারণত সবকিছুই বন্ধ থাকে তাইনা?
- হ্যাঁ।
- তাই আমার পড়াশোনাও বন্ধ ছিল।

আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমার মাথায় ছোটবেলায় শেখা একটা কথা যেন ভন ভন করতে ঘুড়তে লাগলো, “মাইরের নাম লক্ষ্মীকান্ত, ভূত পালায় ভয়ে”। অরুণিমাকে তো আর মারা যায় না। কিন্তু হালকা শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।
এই মেয়ে দাড়াও, দাড়াও বলছি। (আমার হঠাত কঠোর কণ্ঠে অরুণিমা যেন ভয় পেল।) সে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল।
-কান ধরো।
- জ্বী স্যার?
- কান ধরতে বলেছি। ধরো, ধরো বলছি।
অরুণিমা বাধ্য হয়ে কান ধরলো। এবার দাঁড়িয়ে থাকো।

আজ ভালো লাগছিল না। জানিনা কি কারণ ছিল ভালো না লাগার। হয়তো ছাত্রীটাকে শাস্তি দেওয়ার হতে পারে, হতে পারে! আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কাল সকাল আটটায় ক্লাস। তাই আমাকে কাল একটু সকাল উঠতে হবে। কিন্তু কিছুতেই দুচোখে ঘুম আসছিল না। একবার ডানে কাঁত হই, আবার বানে কাঁত হই। এভাবেই সময় পার করছিলাম। হঠাত  ফোনটা বেজে উঠলো। এ তো সেই মেয়ে, যে গতকাল ফোন করেছিল। যে গতরাতে নাম না বলেই ফোন রেখে দিয়েছিল।
-হ্যালো। কেমন আছেন আপনি? (আমি আবার কাউকে প্রথমে শুধু হ্যালো বলতে পারিনা।)
- জ্বী একরকম বেঁচে আছি। আপনি কেমন আছেন?
- খুব একটা ভালো নেই। আজ মনটা খুব খারাপ।
- তাই। তা মন খারাপের কারণ কি? প্রেমঘটিত নাকি?
- আরেহ নাহ! ওসব কিছু না। স্টুডেন্টকে বকা দিয়েছি তো তাই। আসলে একটু বেশিই বকেছি। এতটা ঠিক হয়নি।
- বাহ! স্টুডেন্টের জন্য তো আপনার দারণ টান! নিশ্চই আপনার স্টুডেন্ট সুন্দরী এক মেয়ে।
- হ্যাঁ মেয়ে। তবে সুন্দর কি না বলতে পারিনা। কখনো ওভাবে খেয়াল করে দেখা হয়নি।
- আচ্ছা। এরপর দেখে এসে আমাকে বলবেন।
- তা হয় বললাম। এখন বলুন আপনার কি?
- ওহ তাই তো! আমার নামই তো বলা হয়নি। আমার নাম...
গতদিনের মতো আবার লাইন কেটে গেল। আবার কল ব্যাক করলাম কিন্তু আবারো শোনা যাচ্ছে “আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। একটু পর আবার চেষ্টা করুন”।

এই নাম না জানা অচেনা মেয়েটি প্রতিদিন কল দেয় আমাকে। ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওটে। সম্বোধন ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে নেমে আসে। আস্তে আস্তে কথা বলার সময়সীমাও বাড়তে থাকে। পাঁচ মিনিট... দশ মিনিট... আধ ঘন্টা... এক ঘন্টা। এখন মাঝে মাঝে আমিও কল করে মেয়েটার সাথে কথা বলি। কথা হয় কিন্ত পুরনো সমস্যাটা এখনো রয়ে গেছে। ওর নাম জানতে চাইলে নাম বলে না। নাম জিজ্ঞেস করলে লাইন কেটে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।
-হ্যালো অপূর্ব, কি করছো?
- কিছুনা। এইতো গান শুনছিলাম।
- কি গান?
- ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে, তোমায় করেছে রাণী।
- হঠাত ভালোবাসার গান? কারো প্রেমে পড়েছো নাকি?
- আমি তো প্রেমে পড়েই আছি।
- কার????
- কার আবার! তোমার।
- আমার!!!
- হ্যাঁ তোমার।
- প্রমাণ দাও।
- এই যে তোমাকে নাম জিজ্ঞেস করলেই তুমি লাইন কেটে দাও। তারপরেও আমি তোমার সাথে রাগ না করে ঘন্টার পর ঘন্টা ধৈর্য সহকারে তোমার সাথে কথা বলে যাচ্ছি। এটা কি প্রেম না?
- আচ্ছা বলতো ভালোবাসা কি?
- আসলে ভালোবাসা একেকজনের দৃষ্টিতে একেকরকম। এই ধরো আম্মার এক ফ্রেন্ড বিজয়। ও ভালোবাসা হচ্ছে প্রতি মাসের প্রথম তারিখ।
- কেন?
- কারণ এ দিন সে টিউশনির টাকা পায়। হা হা হা।
- তুমি তো মজা করছো আম্মার সাথে। আমি তোমাকে সিরিয়াসলি প্রশ্নটা করেছি।
- সিরিয়াসলি?
- হ্যাঁ, সিরিয়াসলি।
- তাহলে আজ না। বলব ১৪ ফেব্রুয়ারি।
- সামনা-সামনি বলতে পারবে?
- হ্যাঁ পারব, অফ অফকোর্স পারব। কেন পারব না? বলো কোথায়, কখন বলব? প্লিজ প্লিজ বলো, এই বলো না।
- বেলী পার্কে। বিকাল ৪ টা।
- ঠিক আছে। কিন্তু আমি তোমাকে চিনব কি করে? আজ অন্তত তোমার নামটা বলো।
- ওহ হ্যাঁ তাই তো। আমার নাম...
লাইনটা যথারীতি কেটে গেল। ফোন কেটে গেলে কি হলো, আম্মার মনে লাইন কাটে নি। আমার মনের জমিতে আমি শক্তিশালী পিলার বসিয়ে আরোও বিস্তৃত করতে লাগলাম।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বেলী পার্কে এসে অরুণিমার সাথে দেখা হবে আমি ভাবতেও পারিনি।
-আসসালামুআলাইকুম স্যার, স্যার আপনি এখানে?
- হ্যাঁ মানে এখানে আমার এক ফ্রেন্ড আসবে তো তাই।
- ওহ আচ্ছা।
- কিন্তু তুমি?
- স্যার আমারো এক ফ্রেন্ড আসবে। আসি স্যার।
- ঠিক আছে।
এই বলে চলে গেল ও। আমি ওকে এখানে দেখে খুব অবাক হলাম। আমার ছাত্রী লুকিয়ে দেখা করতে আসছে। আমি ভাবতেও পারছিনা আবার মনে মনেও হাসছি। এই ভেবে আসছি যে, ওর মতো পাগলী কে কিভাবে সামলাবে। যে সামলাতে সেই যোগ্য পুরুষ।
অরুণিমা আজ শাড়ি পরেছে। শাড়িতে ও কে অপূর্ব সুন্দরী লাগছে। অনেক পূর্ণ মনে হচ্ছে। বাসায় ও কে এত বড় লাগে না। আসলে সবই শাড়ির অবদান।
আমি ভাবছি আমার সেই অচেনা ভালবাসার মানুষটি আসছে না কেন? নিজেকেই প্রশ্ন করতে লাগলাম। কিন্তু উত্তর খোঁজে পাচ্ছি না। আমি অনেকবার ও কে ফোন করার চেষ্টা করছি কিন্তু কোনোভাবেই ফোন ডুকছে না। স্যুইচ অফ বলছে। কি করা যায়? নানান কথা ভাবতে লাগলাম। যে মেয়ের নাম জানিনা, চেহারাও অচেনা, তাঁকে আমি কিভাবে খোঁজে বের করব। কিভাবে যে ও কে ভালোবাসার সংজ্ঞা শোনাব। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ৪ টায় আসার কথা, ৫ টা বেজে গেছে। ধ্যাত আর ভালো লাগছে না। চলে যাব কি না ভাবছি। ভাবতে ভাবতে আমি রাস্তার সামনে এসে দাড়াই। গাড়ি আসে, গাড়ি যায়। মানুষ আসে, বাড়ি যায়। কিন্তু আমার সে আসে না। শেষ একটা চেষ্টা করা যাক বলেই ওর নাম্বারে কল লাগালাম। এটায় ফেল হলে গন্তব্য বাড়ির রাস্তা নিশ্চিত। মোবাইল হাতে নেই। হ্যাঁ এবার রিং হচ্ছে।
-হ্যালো, হ্যালো?
- হ্যাঁ হ্যালো বলো।
- তুই কোথায়?
- এইতো কাছেই।
- আচ্ছা এখানে এত ভিড়ের মাঝে তোমাকে চিনব কিভাবে?
- দেখলেই চিনতে পারবে।
- কি যে বলো না। যার নামই জানিনা, তাঁকে আবার দেখলেই চিনতে পারব। কিভাবে সম্ভব? এখনতো বলো তোমার নামটা?
- ওহ হ্যাঁ। আমার নাম...?  আমার নাম “অরুণিমা”।
 আমার মনে হলো যে, নামটি আমি ফোনে শুনিনি। আমার পিছন থেকে আসছে কন্ঠটা। আমি সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার দুষ্টু ছাত্রী অরুণিমা দাঁড়িয়ে আছে নীল শাড়ি পড়ে আর ওর হাতে মোবাইল সেট। যাকে ১ ঘন্টা আগে আমি অপরূপ সুন্দরী বলেছিলাম।
-      কি??? তুমি!!
আমার চোখে মুখে যেন পৃথিবীর সমস্ত বিস্ময় এসে ভর করে।
-      হ্যাঁ আমি। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!
-      -ওহ... হ্যাঁ...। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!

“আমার নাম... অতঃপর ডিসকানেট” (Part – 01)

“আমার নাম... অতঃপর ডিসকানেট” (Part – 01)
লিখাঃ- Raju Das Rudro
.
ইদানীং আমার একটুও ভাল্লাগছে না। ফারহান, মিসবাহ কাউকেই এখন আর পাওয়া যায় না। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। এই কিছুদিন আগেও আমরা তিনজন একসাথে ঘুরতাম। বিকেলটা কাটতো এলাকার মানুষদের সাথে আড্ডা দিয়ে আর হরি কাকুর গরম চা খেয়ে ভালোই কাটতো। হটাত করেই ফাড়ান আর মিস-বাহ সিলেট চলে যায়। ওদের আর কাউকেই পাওয়া যায়  না। যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে গেল। পড়ে রইলাম আমি অপূর্ব। আমি কিছুই করিনা। না করি প্রেম আর না করি টিউশনি। আমার আরেক ফ্রেন্ড বিজয়। ও ও একটা টিউশনি পেল। তাই সে ও ব্যস্ত থাকে। আমার সাথে দেখা হয় না।  আমার একা সময় কাটে না। পেপার পড়ে, মোবাইল টিপে আর কতক্ষণ বা সময় কাটানো যায়। আগের কথা মনে হলো এখন আমার মনে হয় “এই এলো, এই গেলো”। কেন জানি এখন মনে হয় কেউ জীবনটাকে চুইংগামের মতো লম্বা করে দিলো।
.
হটাৎ বিজয়ের আগমন।
-      কিরে কি করিস। চল ঘুরে আসি।
-      তুই এই সময়। কোথা থেকে আসলি বিজয়।  আজ তোর টিউশনি নেই?
-      নারে। ছাত্রের পেট খারাপ। তাই ওর ও ছুটি, আমারও ছুটি। তোর রুমমেট কোথায়?
-      কে? ওহ সজীব। ঐ ব্যাটা তো হুজুর টাইপের পোলা। কোথায় আর যাবেহয়তো মসজিদে গেছে।
-      ওহ। চল দোস্ত মোগলাই খেয়ে আসি।
-      বিল তুই দিবি নাকি আমি?
-      আমিই দিব, চল।
-      কিরে লটারি পেয়েছিস নাকি। মোগলাই চলবে না।  চল স্যুপ খেয়ে আসি।
-      এত বগর বগর করতাছোস ক্যা?  যাহ শালা তোর যাওয়া লাগবো না।
আমি ভয় পেলামআমার মোগলাই আর স্যুপ গেল বলে। বললাম, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। চল মোগলাই খাবতাইনা রে। তুই যা বলবি তাই খাব।
-      কি? ওহ হ্যাঁ.. বিজয়ের চেহারায় তৃপ্তিকর প্রত্যাশিত এক অনুভূতি।
একটু পর আমি আর বিজয় রিকশাতে উঠলাম। গন্তব্য কোনো ভালো হোটেল। ব্যস্ত শহরে যে যার মতো ছোটাছুটি করছে। রিকশার পিছনে রিকশা, গাড়ির পিছনে গাড়ি, পুরুষের পিছন নারী, নারীর পিছন পুরুষ। শুধুই ছোটাছুটি।  আমি হঠাৎ বিজয় কে প্রশ্ন করলাম, দেখতো দোস্ত মেয়েটা হেব্বি সুন্দর না। (বিপরীত দিক থেকে রিকশা করে এক সুন্দরী মেয়ে আসছে।)। বিজয় দূর থেকে দেখেই বললো, হো রে সুন্দরী। বিজয় দূর থেকে না দেখেই এই মন্তব্য করলো, কিন্তু মেয়েটা যখন কাছে আসলো তখন বিজয় থমকে গেল। বললো –
-দোস্ত আর কথা বলিস না রে।
- কেন?
- আরে ব্যাটা এই মেয়েটা আমার ছাত্রের বড় বোন।
- ওহ তাই নাকি? তা ওর সাথে কিছু হয় নাকি মামা?
- দূর শালা। ওর সাথে আমার কথাই হয় না।
- বাদ দে। বল, কিসে পড়ে মেয়েটা?
- ক্লাস মানে? আমগো চাইতে দুই বছরের ছোট হইব। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।
(বিজয় একটু থেমে আবার বলে উঠলো) জানোস মামা, একবার এই মেয়েটারে নিয়ে এক মজার ঘটনা হয়েছে।
-      কি বলতো।
-      একদিন আমি আমার ছাত্র কে আমি পড়াচ্ছিলাম। ওকে পড়াই ওদের ড্রয়িং রুমে। ঐ মেয়েটা আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলআমি ট্যাঁরাই ট্যারাইয়া দেখতেছিলাম। হটাৎ শুনি ও বললো, স্লামালাইকুম। আমি তাড়াতাড়ি করে উত্তর দিলাম “ওয়ালাইকুম আসসালাম”। এরপর ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি ঐ মেয়েটা আমাকে সালাম দেয়নি। মোবাইলে অন্য কাউরে সালাম দিছিলো। কি যে বলি তোকে, আমার যে তখন কি লজ্জা লাগছে। ছাত্রের দিকে তাকিয়ে দেখি শয়তানটা আমাকে দেখে হাসতেছে।
-      হাহাহাহাহাহা। আমি কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিলাম না। তারপর বললাম, দোস্ত তাইলে তো টিউশনি করে অনেক মজা তাইনা রে। তবে আমার মতে ছাত্রের চাইতে ছাত্রী পড়াইতে অনেক ভালো।
-      হো অনেক ভালো তো লাগবই। যদি লাইগগা যায়, তাইলেতো রাজকন্যা প্লাস রাজত্ব।

হঠাত কে যেন বলে উঠলো, ঐ অপু কল ধর! ঐ অপু কল ধর! আমি তাড়াতাড়ি করে কল ধরলাম। বিজয় অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, এইটা আবার কেমন টোন?
-এক্সক্লুসিভ টোন! দাঁড়া কলটা ধইরা নেই। আমি রিসিভ করলাম, হ্যাঁ ভাই বলেন... ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখনি আসছি। কলটা রেখে দিয়ে বললাম, দোস্ত স্বাধীন ভাই কল দিছে। এখনি যেতে বলছে। চল যাই।
.
বসে আছি ড্রয়িংরুমে। শীতকাল বলে ফ্যান ঘুরছিল না। রুমের একপাশের সোফায় আমরা বসে আমি বিজয় আর বিজয় এবং অন্যপাশে স্বাধীন ভাই। স্বাধীন ভাই বললেন,  এটা আমার বোনের বাড়ি। এখানে পড়ানোর কথাই তোমাকে বলেছিলাম। তোমাকে একজন স্টুডেন্টকে পড়াতে হবে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। মেয়েটা কিন্তু একটু চঞ্ছল প্রকৃতির। তোমাকে ধৈর্য সহকারে যত্ন করে পড়াতে হবে। পারবে তো?
-জ্বী ভাইয়া পারব।
- আচ্ছা তোমরা একটু বস। আমি একটু আসছি।
স্বাধীন ভাই অন্যরুমের যাওয়ার সাথে সাথেই বিজয় বলে উঠলো,
-দোস্ত, স্টুডেন্টটা পোলা নাকি মাইয়া?
-  জানিনা তো। পোলাই হবে হয়তো। মেয়ে স্টুডেন্ট কি আমার ভাগ্যে আছে। এই বলে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
ভিতর থেকে একজন মেয়ের উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে বিজয় বললো, এই হয়তো তোর স্টুডেন্ট।
- হবে হয়তো।
একটু পর সব জল্পনার-কল্পনার অবসান ঘটলো। স্বাধীন ভাই বললেন, এই হলো তোমার স্টুডেন্ট।
-ওহ আচ্ছা। তা তোমার নাম কি? (আমি)
- অরু-ণিমা “অরুণিমা” (মেয়েটা)
(মনে মনে বললাম এভাবে বলার কি ছিলো)
.
কয়েকদিনের মধ্যেই আমার ছাত্রী পড়ানোর সাধ মিটে গেল। ছাত্রী তো আমার কোনো কথাই শুনতে চায়না। আমি যদি বলি ডানে, ও বলে বাঁয়ে। যদি বলি, এটা লিখো, ও বলে না স্যার পড়ি।  আমি কয়েকবার ওর পরিক্ষাও নিতে চেয়েছি। কিন্তু পারিনি। পারবো কি করে? যে মেয়ে কথা শুনে না। পড়তে চায় না। একটা বললে আরেকটা করে। তাঁর কাছে তো পরিক্ষা দেওয়াটা ফোর্থ সাব্জেক্টের মতো গুরুত্বহীন!
একদিন পড়ার সময় আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা অরুণিমা তোমার কোনো সাব্জেক্ট পড়তে বেশি ভালো লাগে?
-স্যার আমার কিছুই পড়তে ভাল্লাগেনা।
- কেন?
- জানিনা স্যার।
- আচ্ছা তুমি কি আমার পড়ানো বুঝো না?
- বুঝি স্যার।
- তাহলে পড় না কেন?
- বললাম না স্যার, ভালো লাগে না তাই।
- তাহলে কি করা যায় বলোতো?
- জানিনা স্যার।
- আচ্ছা তুমি সারাদিন কি কর?
- কি করি মানে?
- মানে পড়াশোনা করো না। তো সময় কাটাও কি করে।
- কিছু করিনা স্যার।
- ভারি সমস্যার পড়লাম তো! আচ্ছা আমার কি করতে হবে বলো? তোমার সাথে কি করলে তুমি পড়বে? তুমি যা বলবে আমি তাই করব।
- না না স্যার। আমার সাথে আপনার কিছুই করতে হবে না।
- তোমার মামা কে জানাতে হবে।
এই বলে পড়া বাদ দিলাম ঐদিনের মতো।
ঘড়িতে এখন রাত সাড়ে বারোটা। আজ বেশ শীত পড়েছে। রুমে ভালো লাগছে না তাই বাহিরে গেলাম। তেমন কুয়াশা ও পড়ে নি। তাই রুমে চলে আসলাম। এসময় সারাক্ষণই লেপের মধ্যে ডুকে থাকতে ইচ্ছে করে। আমি লেপের নিচে শুয়ে পড়ালাম। আমার রুমমেট সজীব ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমারও চোখ লেগে গেছিলো। হঠাত শোনা গেল “ঐ অপু কল ধর! ঐ অপু কল ধর”!
হ্যালো স্লামালাইকুম। হ্যালো। (কোনো সাড়াশব্দ নেই) আমি, হ্যালো কথা বলছেন না কেন? ধ্যাত। বিরক্ত হয়ে গেলাম। হ্যালো, কেউ শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা। রেগে গিয়ে লাইন কেটে দিতে চাইছিলাম কিন্তু পারলাম না। হঠাত মোবাইল কথা বলে উঠলো, তাও আবার নারী কন্ঠ।
-হ্যালো, কি বিরক্ত হচ্ছেন নাকি? (অচেনা কন্ঠে) আসলে চুপ করে থেকে আপনার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছিলাম।
- তাই নাকি? (আমি) কিন্তু আমার পরিক্ষা নেওয়ার আপনি কে?
- আমি কে সেটা জানার কি খুব জরুরী?
- হ্যাঁ জরুরী। কারণ, আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।
- আচ্ছা বুঝলা। এখন আমরা ঠিকই অপরিচিত। কিন্তু একটু পরে নাহয় পরিচিত হয়ে যাব। তাছাড়া কথা বললে কি পরিচিত হওয়া যায়?
- হ্যাঁ তা ঠিক বলছেন। আচ্ছা বলেনতো আপনি কে? আমার নাম্বারই বা কোথায় থেকে পেলেন?
- আরে বাবা। আস্তে আস্তে প্রশ্ন করেন। এত প্রশ্ন একসাথে করলে কিভাবে সবগুলোর উত্তর দিব? ধীরে ধীরে উত্তর দেই। কন্ঠ শুনে নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমি একজন মেয়ে। আমার নাম.....

নাম বলার আগেই লাইনটা কেটে গেল। তাড়াতাড়ি করে আমি কল ব্যাক করলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। আমি যতবারই কল দিলাম ততবারই উত্তর মিললো, “আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। একটু পর আবার চেষ্টা করুন”।

চলবে...


অনুতপ্ত

অনিরুদ্র
“অনুতপ্ত”

লিখাঃ- Raju Das Rudro