Tuesday, October 31, 2017

“আমার নাম... অতঃপর ডিসকানেট” (Part – 02)

“আমার নাম... অতঃপর ডিসকানেট” (Part – 02)
লিখাঃ- Raju Das Rudro
.
আজ অরুণিমার পরিক্ষা দেওয়ার কথা। যদিও আমি ধরে নিয়েছি যে অরুণিমা পরিক্ষা দিবে না। যদি সে ভুলক্রমে পরিক্ষা দিয়েই ফেলে তাহলে তা হবে “ সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয়” এমন টাইপের ঘটনা। আমি অরুণিমার সামনে গিয়ে থাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
-আজকে পরিক্ষা তাইনা? নিশ্চই সব পড়া হয়ে গেছে?
- (মুখ অন্ধকার করে সে জবাব দিলো) না স্যার কিছুই হয়নি।
- কেন? কি হয়েছে? শরীর খারাপ ছিল নাকি?
- না স্যার। শরীর খারাপের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল। তাই অনিবার্যকারণবসত আজ পরিক্ষা হবে না।
- কি সব উলটাপালটা বলছো?
- স্যার আজকে তো হরতাল ছিল।
- তো কি হয়েছে?
- স্যার, হরতালে তো সাধারণত সবকিছুই বন্ধ থাকে তাইনা?
- হ্যাঁ।
- তাই আমার পড়াশোনাও বন্ধ ছিল।

আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমার মাথায় ছোটবেলায় শেখা একটা কথা যেন ভন ভন করতে ঘুড়তে লাগলো, “মাইরের নাম লক্ষ্মীকান্ত, ভূত পালায় ভয়ে”। অরুণিমাকে তো আর মারা যায় না। কিন্তু হালকা শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।
এই মেয়ে দাড়াও, দাড়াও বলছি। (আমার হঠাত কঠোর কণ্ঠে অরুণিমা যেন ভয় পেল।) সে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল।
-কান ধরো।
- জ্বী স্যার?
- কান ধরতে বলেছি। ধরো, ধরো বলছি।
অরুণিমা বাধ্য হয়ে কান ধরলো। এবার দাঁড়িয়ে থাকো।

আজ ভালো লাগছিল না। জানিনা কি কারণ ছিল ভালো না লাগার। হয়তো ছাত্রীটাকে শাস্তি দেওয়ার হতে পারে, হতে পারে! আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কাল সকাল আটটায় ক্লাস। তাই আমাকে কাল একটু সকাল উঠতে হবে। কিন্তু কিছুতেই দুচোখে ঘুম আসছিল না। একবার ডানে কাঁত হই, আবার বানে কাঁত হই। এভাবেই সময় পার করছিলাম। হঠাত  ফোনটা বেজে উঠলো। এ তো সেই মেয়ে, যে গতকাল ফোন করেছিল। যে গতরাতে নাম না বলেই ফোন রেখে দিয়েছিল।
-হ্যালো। কেমন আছেন আপনি? (আমি আবার কাউকে প্রথমে শুধু হ্যালো বলতে পারিনা।)
- জ্বী একরকম বেঁচে আছি। আপনি কেমন আছেন?
- খুব একটা ভালো নেই। আজ মনটা খুব খারাপ।
- তাই। তা মন খারাপের কারণ কি? প্রেমঘটিত নাকি?
- আরেহ নাহ! ওসব কিছু না। স্টুডেন্টকে বকা দিয়েছি তো তাই। আসলে একটু বেশিই বকেছি। এতটা ঠিক হয়নি।
- বাহ! স্টুডেন্টের জন্য তো আপনার দারণ টান! নিশ্চই আপনার স্টুডেন্ট সুন্দরী এক মেয়ে।
- হ্যাঁ মেয়ে। তবে সুন্দর কি না বলতে পারিনা। কখনো ওভাবে খেয়াল করে দেখা হয়নি।
- আচ্ছা। এরপর দেখে এসে আমাকে বলবেন।
- তা হয় বললাম। এখন বলুন আপনার কি?
- ওহ তাই তো! আমার নামই তো বলা হয়নি। আমার নাম...
গতদিনের মতো আবার লাইন কেটে গেল। আবার কল ব্যাক করলাম কিন্তু আবারো শোনা যাচ্ছে “আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। একটু পর আবার চেষ্টা করুন”।

এই নাম না জানা অচেনা মেয়েটি প্রতিদিন কল দেয় আমাকে। ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওটে। সম্বোধন ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে নেমে আসে। আস্তে আস্তে কথা বলার সময়সীমাও বাড়তে থাকে। পাঁচ মিনিট... দশ মিনিট... আধ ঘন্টা... এক ঘন্টা। এখন মাঝে মাঝে আমিও কল করে মেয়েটার সাথে কথা বলি। কথা হয় কিন্ত পুরনো সমস্যাটা এখনো রয়ে গেছে। ওর নাম জানতে চাইলে নাম বলে না। নাম জিজ্ঞেস করলে লাইন কেটে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।
-হ্যালো অপূর্ব, কি করছো?
- কিছুনা। এইতো গান শুনছিলাম।
- কি গান?
- ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে, তোমায় করেছে রাণী।
- হঠাত ভালোবাসার গান? কারো প্রেমে পড়েছো নাকি?
- আমি তো প্রেমে পড়েই আছি।
- কার????
- কার আবার! তোমার।
- আমার!!!
- হ্যাঁ তোমার।
- প্রমাণ দাও।
- এই যে তোমাকে নাম জিজ্ঞেস করলেই তুমি লাইন কেটে দাও। তারপরেও আমি তোমার সাথে রাগ না করে ঘন্টার পর ঘন্টা ধৈর্য সহকারে তোমার সাথে কথা বলে যাচ্ছি। এটা কি প্রেম না?
- আচ্ছা বলতো ভালোবাসা কি?
- আসলে ভালোবাসা একেকজনের দৃষ্টিতে একেকরকম। এই ধরো আম্মার এক ফ্রেন্ড বিজয়। ও ভালোবাসা হচ্ছে প্রতি মাসের প্রথম তারিখ।
- কেন?
- কারণ এ দিন সে টিউশনির টাকা পায়। হা হা হা।
- তুমি তো মজা করছো আম্মার সাথে। আমি তোমাকে সিরিয়াসলি প্রশ্নটা করেছি।
- সিরিয়াসলি?
- হ্যাঁ, সিরিয়াসলি।
- তাহলে আজ না। বলব ১৪ ফেব্রুয়ারি।
- সামনা-সামনি বলতে পারবে?
- হ্যাঁ পারব, অফ অফকোর্স পারব। কেন পারব না? বলো কোথায়, কখন বলব? প্লিজ প্লিজ বলো, এই বলো না।
- বেলী পার্কে। বিকাল ৪ টা।
- ঠিক আছে। কিন্তু আমি তোমাকে চিনব কি করে? আজ অন্তত তোমার নামটা বলো।
- ওহ হ্যাঁ তাই তো। আমার নাম...
লাইনটা যথারীতি কেটে গেল। ফোন কেটে গেলে কি হলো, আম্মার মনে লাইন কাটে নি। আমার মনের জমিতে আমি শক্তিশালী পিলার বসিয়ে আরোও বিস্তৃত করতে লাগলাম।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বেলী পার্কে এসে অরুণিমার সাথে দেখা হবে আমি ভাবতেও পারিনি।
-আসসালামুআলাইকুম স্যার, স্যার আপনি এখানে?
- হ্যাঁ মানে এখানে আমার এক ফ্রেন্ড আসবে তো তাই।
- ওহ আচ্ছা।
- কিন্তু তুমি?
- স্যার আমারো এক ফ্রেন্ড আসবে। আসি স্যার।
- ঠিক আছে।
এই বলে চলে গেল ও। আমি ওকে এখানে দেখে খুব অবাক হলাম। আমার ছাত্রী লুকিয়ে দেখা করতে আসছে। আমি ভাবতেও পারছিনা আবার মনে মনেও হাসছি। এই ভেবে আসছি যে, ওর মতো পাগলী কে কিভাবে সামলাবে। যে সামলাতে সেই যোগ্য পুরুষ।
অরুণিমা আজ শাড়ি পরেছে। শাড়িতে ও কে অপূর্ব সুন্দরী লাগছে। অনেক পূর্ণ মনে হচ্ছে। বাসায় ও কে এত বড় লাগে না। আসলে সবই শাড়ির অবদান।
আমি ভাবছি আমার সেই অচেনা ভালবাসার মানুষটি আসছে না কেন? নিজেকেই প্রশ্ন করতে লাগলাম। কিন্তু উত্তর খোঁজে পাচ্ছি না। আমি অনেকবার ও কে ফোন করার চেষ্টা করছি কিন্তু কোনোভাবেই ফোন ডুকছে না। স্যুইচ অফ বলছে। কি করা যায়? নানান কথা ভাবতে লাগলাম। যে মেয়ের নাম জানিনা, চেহারাও অচেনা, তাঁকে আমি কিভাবে খোঁজে বের করব। কিভাবে যে ও কে ভালোবাসার সংজ্ঞা শোনাব। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ৪ টায় আসার কথা, ৫ টা বেজে গেছে। ধ্যাত আর ভালো লাগছে না। চলে যাব কি না ভাবছি। ভাবতে ভাবতে আমি রাস্তার সামনে এসে দাড়াই। গাড়ি আসে, গাড়ি যায়। মানুষ আসে, বাড়ি যায়। কিন্তু আমার সে আসে না। শেষ একটা চেষ্টা করা যাক বলেই ওর নাম্বারে কল লাগালাম। এটায় ফেল হলে গন্তব্য বাড়ির রাস্তা নিশ্চিত। মোবাইল হাতে নেই। হ্যাঁ এবার রিং হচ্ছে।
-হ্যালো, হ্যালো?
- হ্যাঁ হ্যালো বলো।
- তুই কোথায়?
- এইতো কাছেই।
- আচ্ছা এখানে এত ভিড়ের মাঝে তোমাকে চিনব কিভাবে?
- দেখলেই চিনতে পারবে।
- কি যে বলো না। যার নামই জানিনা, তাঁকে আবার দেখলেই চিনতে পারব। কিভাবে সম্ভব? এখনতো বলো তোমার নামটা?
- ওহ হ্যাঁ। আমার নাম...?  আমার নাম “অরুণিমা”।
 আমার মনে হলো যে, নামটি আমি ফোনে শুনিনি। আমার পিছন থেকে আসছে কন্ঠটা। আমি সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার দুষ্টু ছাত্রী অরুণিমা দাঁড়িয়ে আছে নীল শাড়ি পড়ে আর ওর হাতে মোবাইল সেট। যাকে ১ ঘন্টা আগে আমি অপরূপ সুন্দরী বলেছিলাম।
-      কি??? তুমি!!
আমার চোখে মুখে যেন পৃথিবীর সমস্ত বিস্ময় এসে ভর করে।
-      হ্যাঁ আমি। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!
-      -ওহ... হ্যাঁ...। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!

1 comment: