লিখাঃ- Raju Das Rudro
.
ইদানীং আমার একটুও
ভাল্লাগছে না। ফারহান, মিসবাহ কাউকেই এখন আর পাওয়া যায় না। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। এই
কিছুদিন আগেও আমরা তিনজন একসাথে ঘুরতাম। বিকেলটা কাটতো এলাকার মানুষদের সাথে আড্ডা
দিয়ে আর হরি কাকুর গরম চা খেয়ে ভালোই কাটতো। হটাত করেই ফাড়ান আর মিস-বাহ সিলেট চলে
যায়। ওদের আর কাউকেই পাওয়া যায় না। যার
যার মতো ব্যস্ত হয়ে গেল। পড়ে রইলাম আমি অপূর্ব। আমি কিছুই করিনা। না করি প্রেম আর
না করি টিউশনি। আমার আরেক ফ্রেন্ড বিজয়। ও ও একটা টিউশনি পেল। তাই সে ও ব্যস্ত
থাকে। আমার সাথে দেখা হয় না। আমার একা সময়
কাটে না। পেপার পড়ে, মোবাইল টিপে আর কতক্ষণ বা সময় কাটানো যায়। আগের কথা মনে হলো
এখন আমার মনে হয় “এই এলো, এই গেলো”। কেন জানি এখন মনে হয় কেউ জীবনটাকে চুইংগামের
মতো লম্বা করে দিলো।
.
হটাৎ বিজয়ের আগমন।
-
কিরে কি করিস। চল ঘুরে আসি।
-
তুই এই সময়। কোথা থেকে আসলি বিজয়। আজ তোর টিউশনি নেই?
-
নারে। ছাত্রের পেট খারাপ। তাই ওর ও ছুটি, আমারও ছুটি।
তোর রুমমেট কোথায়?
-
কে? ওহ সজীব। ঐ ব্যাটা তো হুজুর টাইপের পোলা। কোথায় আর
যাবে। হয়তো মসজিদে গেছে।
-
ওহ। চল দোস্ত মোগলাই খেয়ে আসি।
-
বিল তুই দিবি নাকি আমি?
-
আমিই দিব, চল।
-
কিরে লটারি পেয়েছিস নাকি। মোগলাই চলবে না। চল স্যুপ খেয়ে আসি।
-
এত বগর বগর করতাছোস ক্যা? যাহ শালা তোর যাওয়া লাগবো না।
আমি ভয় পেলাম। আমার মোগলাই আর স্যুপ গেল
বলে। বললাম, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। চল মোগলাই খাব। তাইনা রে। তুই যা বলবি তাই
খাব।
-
কি? ওহ হ্যাঁ.. বিজয়ের
চেহারায় তৃপ্তিকর প্রত্যাশিত এক অনুভূতি।
একটু পর আমি আর বিজয়
রিকশাতে উঠলাম। গন্তব্য কোনো ভালো হোটেল। ব্যস্ত শহরে যে যার মতো ছোটাছুটি করছে।
রিকশার পিছনে রিকশা, গাড়ির পিছনে গাড়ি, পুরুষের পিছন নারী, নারীর পিছন পুরুষ।
শুধুই ছোটাছুটি। আমি হঠাৎ বিজয় কে প্রশ্ন
করলাম, দেখতো দোস্ত মেয়েটা হেব্বি সুন্দর না। (বিপরীত দিক থেকে রিকশা করে এক
সুন্দরী মেয়ে আসছে।)। বিজয় দূর থেকে দেখেই বললো, হো রে সুন্দরী। বিজয় দূর থেকে না
দেখেই এই মন্তব্য করলো, কিন্তু মেয়েটা যখন কাছে আসলো তখন বিজয় থমকে গেল। বললো –
-দোস্ত আর কথা বলিস না
রে।
- কেন?
- আরে ব্যাটা এই মেয়েটা
আমার ছাত্রের বড় বোন।
- ওহ তাই নাকি? তা ওর
সাথে কিছু হয় নাকি মামা?
- দূর শালা। ওর সাথে
আমার কথাই হয় না।
- বাদ দে। বল, কিসে পড়ে
মেয়েটা?
- ক্লাস মানে? আমগো
চাইতে দুই বছরের ছোট হইব। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।
(বিজয় একটু থেমে আবার
বলে উঠলো) জানোস মামা, একবার এই মেয়েটারে নিয়ে এক মজার ঘটনা হয়েছে।
-
কি বলতো।
-
একদিন আমি আমার ছাত্র কে আমি পড়াচ্ছিলাম। ওকে পড়াই ওদের
ড্রয়িং রুমে। ঐ মেয়েটা আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল। আমি ট্যাঁরাই ট্যারাইয়া
দেখতেছিলাম। হটাৎ শুনি ও বললো, স্লামালাইকুম। আমি তাড়াতাড়ি করে উত্তর দিলাম “ওয়ালাইকুম
আসসালাম”। এরপর ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি ঐ মেয়েটা আমাকে সালাম দেয়নি। মোবাইলে অন্য
কাউরে সালাম দিছিলো। কি যে বলি তোকে, আমার যে তখন কি লজ্জা লাগছে। ছাত্রের দিকে
তাকিয়ে দেখি শয়তানটা আমাকে দেখে হাসতেছে।
-
হাহাহাহাহাহা। আমি কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিলাম না।
তারপর বললাম, দোস্ত তাইলে তো টিউশনি করে অনেক মজা তাইনা রে। তবে আমার মতে ছাত্রের
চাইতে ছাত্রী পড়াইতে অনেক ভালো।
-
হো অনেক ভালো তো লাগবই। যদি লাইগগা যায়, তাইলেতো
রাজকন্যা প্লাস রাজত্ব।
হঠাত কে যেন বলে উঠলো,
ঐ অপু কল ধর! ঐ অপু কল ধর! আমি তাড়াতাড়ি করে কল ধরলাম। বিজয় অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা
করলো, এইটা আবার কেমন টোন?
-এক্সক্লুসিভ টোন!
দাঁড়া কলটা ধইরা নেই। আমি রিসিভ করলাম, হ্যাঁ ভাই বলেন... ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখনি আসছি। কলটা রেখে দিয়ে বললাম,
দোস্ত স্বাধীন ভাই কল দিছে। এখনি যেতে বলছে। চল যাই।
.
বসে আছি ড্রয়িংরুমে।
শীতকাল বলে ফ্যান ঘুরছিল না। রুমের একপাশের সোফায় আমরা বসে আমি বিজয় আর বিজয় এবং
অন্যপাশে স্বাধীন ভাই। স্বাধীন ভাই বললেন,
এটা আমার বোনের বাড়ি। এখানে পড়ানোর কথাই তোমাকে বলেছিলাম। তোমাকে একজন স্টুডেন্টকে
পড়াতে হবে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। মেয়েটা কিন্তু একটু চঞ্ছল প্রকৃতির। তোমাকে
ধৈর্য সহকারে যত্ন করে পড়াতে হবে। পারবে তো?
-জ্বী ভাইয়া পারব।
- আচ্ছা তোমরা একটু বস।
আমি একটু আসছি।
স্বাধীন ভাই অন্যরুমের
যাওয়ার সাথে সাথেই বিজয় বলে উঠলো,
-দোস্ত, স্টুডেন্টটা
পোলা নাকি মাইয়া?
- জানিনা তো। পোলাই হবে হয়তো। মেয়ে স্টুডেন্ট কি
আমার ভাগ্যে আছে। এই বলে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
ভিতর থেকে একজন মেয়ের
উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে বিজয় বললো, এই হয়তো তোর স্টুডেন্ট।
- হবে হয়তো।
একটু পর সব
জল্পনার-কল্পনার অবসান ঘটলো। স্বাধীন ভাই বললেন, এই হলো তোমার স্টুডেন্ট।
-ওহ আচ্ছা। তা তোমার
নাম কি? (আমি)
- অরু-ণিমা “অরুণিমা”
(মেয়েটা)
(মনে মনে বললাম এভাবে
বলার কি ছিলো)
.
কয়েকদিনের মধ্যেই আমার
ছাত্রী পড়ানোর সাধ মিটে গেল। ছাত্রী তো আমার কোনো কথাই শুনতে চায়না। আমি যদি বলি
ডানে, ও বলে বাঁয়ে। যদি বলি, এটা লিখো, ও বলে না স্যার পড়ি। আমি কয়েকবার ওর পরিক্ষাও নিতে চেয়েছি। কিন্তু
পারিনি। পারবো কি করে? যে মেয়ে কথা শুনে না। পড়তে চায় না। একটা বললে আরেকটা করে।
তাঁর কাছে তো পরিক্ষা দেওয়াটা ফোর্থ সাব্জেক্টের মতো গুরুত্বহীন!
একদিন পড়ার সময় আমি ওকে
জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা অরুণিমা তোমার কোনো সাব্জেক্ট পড়তে বেশি ভালো লাগে?
-স্যার আমার কিছুই পড়তে
ভাল্লাগেনা।
- কেন?
- জানিনা স্যার।
- আচ্ছা তুমি কি আমার
পড়ানো বুঝো না?
- বুঝি স্যার।
- তাহলে পড় না কেন?
- বললাম না স্যার, ভালো
লাগে না তাই।
- তাহলে কি করা যায় বলোতো?
- জানিনা স্যার।
- আচ্ছা তুমি সারাদিন
কি কর?
- কি করি মানে?
- মানে পড়াশোনা করো না।
তো সময় কাটাও কি করে।
- কিছু করিনা স্যার।
- ভারি সমস্যার পড়লাম
তো! আচ্ছা আমার কি করতে হবে বলো? তোমার সাথে কি করলে তুমি পড়বে? তুমি যা বলবে আমি
তাই করব।
- না না স্যার। আমার
সাথে আপনার কিছুই করতে হবে না।
- তোমার মামা কে জানাতে
হবে।
এই বলে পড়া বাদ দিলাম
ঐদিনের মতো।
ঘড়িতে এখন রাত সাড়ে
বারোটা। আজ বেশ শীত পড়েছে। রুমে ভালো লাগছে না তাই বাহিরে গেলাম। তেমন কুয়াশা ও
পড়ে নি। তাই রুমে চলে আসলাম। এসময় সারাক্ষণই লেপের মধ্যে ডুকে থাকতে ইচ্ছে করে।
আমি লেপের নিচে শুয়ে পড়ালাম। আমার রুমমেট সজীব ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমারও চোখ
লেগে গেছিলো। হঠাত শোনা গেল “ঐ অপু কল ধর! ঐ অপু কল ধর”!
হ্যালো স্লামালাইকুম।
হ্যালো। (কোনো সাড়াশব্দ নেই) আমি, হ্যালো কথা বলছেন না কেন? ধ্যাত। বিরক্ত হয়ে
গেলাম। হ্যালো, কেউ শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা। রেগে গিয়ে লাইন কেটে দিতে চাইছিলাম
কিন্তু পারলাম না। হঠাত মোবাইল কথা বলে উঠলো, তাও আবার নারী কন্ঠ।
-হ্যালো, কি বিরক্ত
হচ্ছেন নাকি? (অচেনা কন্ঠে) আসলে চুপ করে থেকে আপনার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছিলাম।
- তাই নাকি? (আমি)
কিন্তু আমার পরিক্ষা নেওয়ার আপনি কে?
- আমি কে সেটা জানার কি
খুব জরুরী?
- হ্যাঁ জরুরী। কারণ,
আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।
- আচ্ছা বুঝলা। এখন
আমরা ঠিকই অপরিচিত। কিন্তু একটু পরে নাহয় পরিচিত হয়ে যাব। তাছাড়া কথা বললে কি
পরিচিত হওয়া যায়?
- হ্যাঁ তা ঠিক বলছেন।
আচ্ছা বলেনতো আপনি কে? আমার নাম্বারই বা কোথায় থেকে পেলেন?
- আরে বাবা। আস্তে
আস্তে প্রশ্ন করেন। এত প্রশ্ন একসাথে করলে কিভাবে সবগুলোর উত্তর দিব? ধীরে ধীরে
উত্তর দেই। কন্ঠ শুনে নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমি একজন মেয়ে। আমার নাম.....।
নাম বলার আগেই লাইনটা
কেটে গেল। তাড়াতাড়ি করে আমি কল ব্যাক করলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। আমি যতবারই
কল দিলাম ততবারই উত্তর মিললো, “আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ
প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। একটু পর আবার চেষ্টা করুন”।
চলবে...
No comments:
Post a Comment